Home / পাঁচ কারণে মাথাপিছু আয় বেড়েছে

বাণিজ্য

পাঁচ কারণে মাথাপিছু আয় বেড়েছে

পাঁচ কারণে মাথাপিছু আয় বেড়েছে

পাঁচটি সূচক বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে প্রেরণা হয়ে কাজ করেছে। এগুলো হলো শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, বিদ্যুতায়নে প্রযুক্তির বিস্তার, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিনিয়োগ। এসব সূচক তাদের আয় বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষায় গতি প্রেরণা সৃষ্টি করেছে। ফলে এসব সূচকই গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের মানুষ ও পরিবারের আয় বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিআইডি) আয়োজিত ‘আকাঙ্ক্ষার গতি প্রেরণা: বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিআইডিএসের গবেষক মাহির এ রহমান যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ

মূল প্রবন্ধের ওপর বিশেষ বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তাদের আয় বাড়িয়ে দেয়। যেসব দেশ এই প্রেরণার উৎসগুলো যত বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে, তারা তত বেশি লাভবান হবে। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিতে আকস্মিক আঘাত এলে উন্নয়নের গতি কমতে পারে। যেমন এখন বিশ্বব্যাপী একধরনের অর্থনৈতিক সংকট চলছে।

তৌফিক-ই-ইলাহী অনুপ্রেরণার উদাহরণ দিয়ে আরও বলেন, ‘আমরা যখন স্বাধীনতা লাভ করি, তখন পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল অর্ধেক। অথচ মাথাপিছু আয়ে সেই পাকিস্তানকে অনেক আগেই আমরা ছাড়িয়ে গেছি। এখন তাদের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩০ শতাংশ বেশি।’

সেমিনারের মূল প্রবন্ধের ওপর বিশেষ বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির ভূমিকা আছে। সংস্কৃতি উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষায় প্রেরণা দেয়। বাংলাদেশের এমন কিছু নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষায় প্রেরণা দিয়েছে। যেমন নারীর কর্মসংস্থান, নারীশিক্ষা, শিশুমৃত্যু হ্রাস—এসবই সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। বলেন, এ দেশের গরিব নারীদের সামনে যে ধারণা হাজির করা হয়েছে, সেটা তাঁরা গ্রহণ করেছেন। যেমন খাওয়ার স্যালাইন শিশুমৃত্যু কমাতে সহায়তা করেছে। নারীদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, শিশুমৃত্যু হ্রাস—সবকিছুর সমন্বিত ফল মিলেছে। তিনি মনে করেন, গরিব মানুষের অর্থনৈতিক সুযোগ বেড়েছে। গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে নিজেদের উন্নতির তাগিদ আছে। বাংলাদেশের এই ঘটনা ব্যতিক্রমী।

আকাঙ্ক্ষার কিছু দিকের সমালোচনাও করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, লুটপাট ও মাস্তানির মতো বিষয় উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষাকে খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে। আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মূল্যবোধ সম্পৃক্ত আছে। এই দুটির সমন্বয় ঘটাতে পারলে উন্নয়ন প্রেরণা গতি পায়।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজধানীর সড়কে অনেক এসইউভি চলতে দেখা যায়, ধনীরাই এসব গাড়ি চালান। এসব গাড়িতে চালকের আসনে নানা ধরনের গ্যাজেট থাকে, যা মূলত চালকের কাজে লাগে। ধনীরা নিজেদের সম্মান রক্ষায় গাড়ির চালককে এসব অপ্রয়োজনীয় সুবিধা দেন, ধনসম্পদ দেখানোই যেন তাঁদের আকাঙ্ক্ষা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি না হলে মানুষের উত্তরণ হতো না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোবিষয়ক নীতি প্রণয়ন করেছে সরকার, সেই সঙ্গে করেছে বিনিয়োগ—এসবের বদৌলতে বাংলাদেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা সফল হয়েছে।

বিনায়ক সেন বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নপ্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সরকারের আমলে বিতর্ক হয়নি। প্রায় সব সরকার সামাজিক উন্নয়নকাঠামো নিয়ে একমত ছিল। এসব উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষায় গতি আনতে ভূমিকা পালন করেছে।