Home / মুদিদোকানের শ্রমিক থেকে সফল উদ্যোক্তা

বাণিজ্য

মুদিদোকানের শ্রমিক থেকে সফল উদ্যোক্তা

মুদিদোকানের শ্রমিক থেকে সফল উদ্যোক্তা

শেরপুর সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম রৌহা। গ্রামটির চারপাশ সবুজ ধানখেতে মোড়ানো। সবুজ ধানখেতের ভেতর হঠাৎ করেই নজর কাড়ে একটি ফলবাগান, সেখানেও সবুজের সমারোহ। বাগানের নাম ‘মা-বাবার দোয়া ফ্রুটগার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম’। চার বছর আগে ৯ একর জমিতে এই বাগান গড়ে তোলেন জেলা সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের কুঠুরাকান্দা গ্রামের মো.হজরত আলী আকন্দ। এখানে দেশি-বিদেশি ও বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলগাছের চারার পাশাপাশি ১০ থেকে ১২ ধরনের ফলের আবাদ হচ্ছে। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, ড্রাগন, আঙুর, পেঁপে, খেজুর, আগর, মালভেরি, আম ও লেবু। তবে সবচেয়ে বেশি আবাদ মাল্টার। বর্তমানে এই বাগানসহ হজরত আলীর ১৮টি বাগানে উৎপাদিত হচ্ছে রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ ফল। এসব ফল বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

শেরপুর সদর উপজেলার কুঠুরাকান্দা গ্রামের ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ আকন্দের ছেলে হজরত আলী আকন্দ (৩৮)। পড়ালেখা করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। পরিবারের অভাব-অনটন আর আর্থিক সংকটের কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান তিনি। তখন ১৯৮৯ সাল। প্রথমে একটি মুদিদোকানে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে নিজেই যাত্রাবাড়ীতে একটি মুদিদোকান দেন। পরে চাল, ডাল, আটা, ময়দার পাইকারি ব্যবসায় নামেন তিনি। সেই ব্যবসাই তাঁকে আরও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। একপর্যায়ে ফিরে আসেন গ্রামে। এ সময় তিনি জানতে পারেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার চাষ হচ্ছে।

এমন খবর জেনে ২০১৪ সালে মাল্টা চাষের চিন্তাভাবনা শুরু করেন হজরত আলী। এ জন্য ইউটিউব থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার ফলবাগানে গিয়ে মাল্টা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন শুরু করেন। এরপর ২০১৮ সালে শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা গ্রামে এসে তিন একর জমি কেনেন আর ছয় একর জমি কৃষকের কাছ থেকে ২০ বছর মেয়াদে ইজারা নেন। সব মিলিয়ে ৯ একর জমিতেই গড়ে তোলেন ফলের বাগান। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার মাল্টাগাছের চারা রোপণ করেন। পাশাপাশি পেয়ারা, পেঁপে, আঙুর, কমলা, ড্রাগন ও লেবুর আবাদ করেন। চার বছরের ব্যবধানে রৌহা গ্রামের বাগানটিকে ৪৩ একর জমিতে সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে সদর উপজেলার রৌহা, কামারিয়া, ভাতশালা ও বলাইয়েরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৬৪ একর জমিতে ১৮টি ফলবাগান ও নার্সারি রয়েছে হজরত আলীর। এসব বাগানে মাল্টা, কমলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০ লাখ ফলদ গাছ ও ৫০ লাখ চারা আছে। এভাবেই হজরত আলী মাল্টাসহ মিশ্র ফলবাগান গড়ে তুলে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এখন হজরত আলীর বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ ভিড় করেন।

৭ অক্টোবর রৌহা গ্রামে হজরত আলীর ফলবাগানে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাগানটি সবুজে ঢাকা। বাগানের প্রবেশমুখ থেকে তৈরি করা হয়েছে হাঁটার পথ। এই পথের দুই পাশে বাঁশের খুঁটি স্থাপন করে তার ওপর নেট (জাল) লাগিয়ে আঙুর ফলের আবাদ করা হয়েছে। পুরো বাগানে আছে মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে ও ড্রাগন ফলের কয়েক হাজার গাছ। কয়েকজন শ্রমিক বাগানের পরিচর্যা করছেন। আর কয়েকজন শ্রমিক মাল্টা গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করছেন। বাগানের দোতলা অফিস ভবনের ছাদেও অর্ধশত ড্রামের ভেতর লাগানো হয়েছে মাল্টাগাছ।

মাল্টা ছাড়া হজরত আলীর বাগানে দেশি-বিদেশি ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ফলদ গাছের চারাও উৎপাদিত হচ্ছে। এসব চারার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং কমলার চারা, চায়না কমলা, নাগপুরী কমলা, বারি ১ মাল্টা, মিসরীয় মাল্টা, থাই ফাইভ পেয়ারা, ড্রাগন, বারোমাসি আম, রেড লেডি পেঁপে, রামবুটান, থাই শরিফা, কালো আঙুর, ডুমুর, আলুবোখারা, লটকন, বেদানা, অ্যাভোকাডো, কাঁঠাল, জলপাই ইত্যাদি। আছে মৎস্য, পোলট্রি ও ডেইরি খামার।